Saturday, February 02, 2008

রঙের গান আর গাই না

বাউল আব্দুল করিম বলে, রঙের গান আর গাইনা।গাই না। গাই না। মাথা ঝাঁকাই। বেনারসের গলির মত চুল সব বাড়ি ঘর নিয়ে , কয়েকটা শহর, মেঘের বিদ্যুত মেঘেই যেমন, ষষ্টি বাউলার জামা দেখি, তাপ্পি তাপ্পি গল্প।



ঝাঁকড়া গাছে কাকাতুয়া বসে আছে, সকাল থেকেই। মোকাম নৌকা বায়। পবন আর সত্যেনদাস মিক্সের দিকে। পরজনমে রাধা হয়ো তুমি প্রিয়া। বিরহ বসে আছে মোড়ায়, সিলেটের কোন পাহাড়ে। আমলকি রঙের শাড়িতে মেরুন পাড় শিশিরে ভিজে যম কালো। শুয়ে পড়া ঘাসে সব গল্প।
আমরা সকাল থেকে গান শুনছি। বাইরে বৃষ্টি। ম্লান জানালা, ঘোলা ঘোলা, গাছে আর সবুজ নেই। সন্দীপনের গলাও ভেসে আসছে। গাই না গাই না। বিদিতলালের, সেই একসাথে সুয়া উড়িল। কাজ বাকী, গান শুধু কিলবিল করছে নদীনালা জুড়ে পাকাল মাছের মত।



আমরা বৃষ্টি হই, কখনও বা নদী নালাদূরে ব্রীজ বরাবর বাসেরা চলে যায়বেহালার ছড়ের মত সব ট্রাকসব মুছে ব্ল্যাকবোর্ড জেগে ওঠে ফ্ল্যাট বাড়ি জুড়ে, আঁধারে সবুজ হিংচা পাতার নকশা আমরা দেখি আর শুনি সারাটা সকালঐ কালমেঘ নদী আর রাঙাচিতা পাহাড়

ইচ্ছামত ডাকছি যে নামে

কংসাবতী নীল হয়ে ছিল। পাখি ছোট্ট ছোট্ট। এলোকেশে পাহাড়ের হিরণ্যদ্যুতি আসলে সেসবই কুয়াশা।


এক সমুদ্র ছিল বালির কিস্কিন্ধ্যা জুড়ে। বৃষ্টি ভেলা মাছেদের ট্রলার আমাদের বাচালদিন জুড়ে কেবল সেজে গেল খিলি খিলি পানের মত। টিপ টিপ টিপ টিপ।


ট্রেন যে রাস্তা দিয়ে গেল, ও ঢালে ফেলে গেল প্রাচীন চা বাগান। রাস্তার কাদা নিয়ে কামলালেবু তার ছেঁড়া চট থলে থেকে পাড়তেই থাকলো। সে মস্ত কমলা দুপুর।


আমাদের বেড়ানোর গল্পেরা দেখা দেবে বলরামপুরের সেই ছোট্ট জঙ্গল জুড়ে। বাচ্চারা বেয়ে বেয়ে ওঠে, পাখি ধরার ছলে। সেই বুঝি ছিল পাখিদের মরণ, ছকটক।


জলপাইগুড়ির দোকানে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ বিহু শুনলাম। দূরে মেঘের ইশারার মত পাহাড়। কাঁপল, কাঁপতেই থাকল। গানেরা তো এমনই ঘরে ঘুরে বেড়ায়, বেড়াক।


এভাবে আমরাও একদিন গান হয়ে গেলাম। ইস্নিপ্সের দোকানজুড়ে আমাদের গানের গোলাঘর। ভাটিয়ালি সন্ধ্যায় সেই কাদা বালি চিকচিক করে, ঘোরে।


দিন বদলায়। অন্যগান শুনি। অন্য জায়গায় যাই। কেবল ঝুরো ঝুরো মাটি মাটি পিছু ছাড়ে না। চটিতে, চুলে সব জাড়িয়ে। চিকচিক করে। ঘোরে এ মাথা থেকে ও মাথা, শিরায় কঙ্কালে শিরায় এ মেঘ ও মেঘ। তারাও বোধহয় নিজেদের গান মনে করে।

চৈত্রের কাফন, পৌষালি রাতে, সামলে রাখ জোছনাকে

চৈত্রের কাফন
-------------

যে গেছে বনমাঝে চৈত্র বিকেলে
যে গেছে ছায়াপ্রাণ বনবীথিতলে
বন জানে অভিমানে গেছে সে অবহেলে
যে গেছে অশ্রুময় বন-অন্তরালে

দরজার শুকনো কাঠে পালিশের কারুকার্যে দেবুদার মুখ ভেসে আসে। হা হা হি হি বাতাসে ওড়া চুল নিয়ে পরমারও, সঙ্গত কারণে। ঘরে ফেরার গানে গানে লেকগার্ডেন্স। ট্রেন যায়, বেহালার আওয়াজ ছাপিয়ে, কাফনের সাইরেন যদিও আওয়াজ মৌন, গৌন যৌন অত্যাচার। বাহুবন্ধে মোটা ঘড়ি, যদি জীবন উতরোয় ট্যাবলেটে ট্যাবলেটে, কী জানি কি হয় । পাতা ঝরে উত্তরায়। ট্রলি যায়, পুরুলিয়া বলরামপুর, বড়াবাজার, ঝালদা। মন্দ মেয়ে জুড়ে উই পোকা। গাছে গাছে সাঁতরায়।


ছায়ার বিড়াল খেলা করে ওক গাছের সাথে। আসলে এই বাস স্ট্যান্ডে কিছু নেই, নেই কিছু নেই। কিছু সিগারেট টুকরো, বাস আসার টিনতে টেবিল। কোনদিনও হিসাব মেলে না। কি যে ছাইপাশ লেখা, আজ আবার হালকা বরফ পড়েছে, কাজেই লেটস্য লেট। বিয়ারের বোতলের সাথে,আপেল ফুলেরা উঠোনে ছড়িয়ে। সজনে ফুলের কথা মনে পরে, দেশ আমার দেশ। পরীশিলিত সন্ধ্যাযাপনের চাট ও পান সমাপনে মাদকতার প্রশ্রয় পাইনা ঠিক মত।


মহীনের ঘোড়া বলে আজ আর চাঁদ নেই মাথার উপরে। বিশাল চাঁদোয়া, ঘচর ঘচর মিউজিশিয়ানেরা। বেদম, হিংচে গাছের মত আধাজলে । আব্রাহামদা নাচছে, ঘোড়ার মত, আ হা, দ্য প্রফেটের মত আমাদের ১৬ আনা কলার কাঁদি যদি ডানা হয়ে যায়, আ হা, আপশোষ এক জীবনে কখনই মেটেনা। ঋতিকা আর অন্তরা পাশাপাশি দাঁড়ালে দেখি রক্ত সমেত মেটে মানে যকৃতেরা দুলছে দুটি আলাদা মানচিত্রে।


পৌষালি রাতে
------------

গৌতমদা, ইয়ে মানে, আমাদের নেশা ভাঙ। চাঁদ ও গেল আর এল না। রাতে হাঁটলাম। পার্কসার্কাস অবধি, শিরারা রাস্তার মত নেমে এল। কাঁপছে, হাটছে। গানেরা শাড়ির মত , লেডিস পার্ক ছাড়ালাম। আমি বালিতে গাড়াচ্ছি, রং , শাড়ি পেঁচাতে পেঁচাতে গানের মত, পিছনে হিরণ দা এঁকেই চলেছে। তখন কাগজে ছিল , রঙ ছিল, আকাশে চাঁদ ছিল, করুনার মত। পুকুরে পুকুরে সব গানেরা ঢেউ হতে হতে সিডি হয়ে গেল চাঁদের আলোয়, চাঁদনি চকে সিডির ব্যবসায় আমরাও ছিলাম দুত্তোর কবিসভায় বা মহীনের কোন শ্বাসরোধী শোতে।


এবং জোছনা
------------

মাই ডেয়ার বেদের মেয়ে,
একটু নাচ। ১ ২ ৩, ৪ ৫ ৬ বা ডিস্কো, ইট ইজ ।ঠুন ঠুন ঠুন চুড়ির তালে, তুই যা করবি তাই ফাটাফাটি। বিগ বস। টেলিভিশন, সিটিয়া। রাখি সাওয়ান্তের ইনার, মাইরি তাকাইনি। কাশ্মীরা, আইটেম, তুই সেরা। আমার চুমু নিস।


চিলের মত এস আমার বুকে, এরোপ্লেন হয়ে একটু বিষ তুলে নাও। নুন মুখে চুষে দাও আমার রোদ ফাটা মাটি। আমায় ঘুম পাড়াও।

কাফন রেডি। শব্দ কেন্নো, চিন্তা নেই। তোর জন্য ঢেমনি, কত আর বাঁচব?
কেউ দাড়ি লাল-নীল করে ফেলল। কেউ কালো চশমা পরে গাইল।
আয় আমার চাঁদসোনা, আয় ফিরে আয়।


ইতি
মহীনের বাবাসকল

লেখালিখি শেষেও জোনাকি সন্ধ্যাবন্ধু

কিছু বোতলে লেখা থাক। কিছু কলাপাতায়, যেন শিশির টুপটুপ। আসলে অক্ষর দিবানিশি ওড়ে, সাড়া দেয় রাতের গভীরে। তারা সব জোনাকি পোকা হয়ে বেঁচে আছে ফ্লায়িং সসারের সংসারে। কড়া নাড়ে, কলিং বেলের বোতাম কিম্বা ছোলার ডাল দিয়ে লুচি, অথচ এখন সকাল। রাত বহু বহু দূর।


কাগজ ভাঁজ হল, নৌকায় এরোপ্লেনে। মোবাইল ফোনগুলি কিছু ওয়াচটাওয়ারের মত সেনানীহানার কথা বলে গেল সীমান্ত বরাবর। ধানের শীষে চিরে গেল মাড়ি, গোলাপ জলে তরুন কিশোর। ভিজে গেল ঘুড়ির আঁচল। তখন সকাল ছিল ,ঘাসে ঘাসে। সন্ধের বোতল পড়ে ছিল মৃত ভিজে খড়ে, ভাঙা ঘন লাল চুড়ি , তাই ঠিক বোঝা গেল না রক্তের দাগ। তাই মুখবন্ধহীণ বোতলে ভরা সন্ধ্যাবন্ধুরা মিশে গেল মাটিতে। হায় হায় মাটি।



ডাবল লাইনারে আঁকা ঠোঁট। ডেস্কটপে হাসি, গণিতের উপাখ্যানমালা জবাফুল হয়ে এল গাছে গাছে এবং সানিয়া মির্জার মত সবকিছু গোলগোল। আকাশ লাল। সন্ধ্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার অপূর্ব সময়। এক গোল টেবিল ঘিরে আমার বন্ধুরা অনেক কথা বলল জোনাকির মত। নড়ে উঠল কচুপাতার ভাঁজ হওয়া কোণ, অভূতপূর্ব সুপুরি। মেঝে জুড়ে অঙ্কুর বেরনো ছোলা, মটর ও ডিমেরা, নিচে উপরে দুইদিকেই আকাশ দেখা যায়। সন্ধ্যাবন্ধুদের পাল্লায়। হায় চোখ, কিছুতেই ইলাস্টিক হয় না। হয় না।


ধর একটা মোমবাতি ও কলাপাতা, নড়ছে। রাত বাড়ছে। টিকটিকি অনেক দূরে, স্রেফ মোরোগের ঝুঁটির মত। এখন রাত, অনেক রাত। কুকুরেরা সব যক্ষা হাসপাতলের বারান্দায় শুয়ে। লেখালিখি শেষ হয়ে গেছে বলে শুয়ে আছে , বা পাড়া থেকে বিতাড়িত অদৃশ্য জোনাকির মত। অক্ষরেরা নেমে আসেনি ফ্রেম বরাবর। সে শুধু ছবি, আর তার কলঙ্ক দোয়াত শুকিয়ে রাত ভোর হচ্ছে ধিরে ধিরে। স্যালাইন স্লো।