Saturday, June 17, 2006

প্রিয় পাঠিকা 0.01


প্রিয় পাঠিকা,


সক্কাল সক্কাল তোমায় গপ্পোটা বলতে চাইলাম, শুনলে না, সেটা রাগে-দু:খে-শোকে ভেঙ্গে তিন টুকরো হয়ে গেল...



প্রথম টুকরো
------
বেশ পুরনো,যেমন তেমন, কাটা ছেঁড়া যেমন থাকে, থাকুক, কোন রমনী কন্ঠও নেই যে ,বাবা মুস্তাফা, বলে ডেকে উঠবে, সুতরঁআ...


ক্ষং৷ বেল পাহাড়ি, লালগড় পেরিয়ে, তুলসির জিপসিতে, বুদ্ধবাবু এমনটাই প্রবাদে পরিনত করবেন ঠিক দুই বছর পর, যার চাকা খুলে গেলেও ঠিক এসে জুড়ে যায়, গায়ষনী না জপলেও, মকর সংষন²আন্তির সুর্য পোচের মত গলে যাচ্ছে, ফ্যাট ফ্যাটে সাদা আকাশে, আমাদের চোখ ও মন সাদা দীর্ঘক্ষণ যাবত্, অপ্রতুল হাঁড়িয়ায় আমরা শিলাজিত্, নদী যদি মদ হত...একমাষন তুলসি সিটবেল্ট হয়ে বসে, নদীর জলে উল্কী আঁকছে শেষ রৌদ্রচ্ছটা, ঝপা ংটুসু পড়ল জলে, বৃন্দ গানে সমবেত ভাবে ফিরে যাওয়া পাহাড় ডিঙিয়ে, পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি, সুতরা ং তুলসিও...


পাহার টপকেই চিত্তির,এত মানুষ, দলে ভেঙে ভেঙে নাচ আর গান, জীবনের প্রথম ঘোড়া নাচ, কোমরে ঝোলে বাঁশের স্ট্রাকচার, আলতা মাখা ঠোঁট, লাল কমলা বেগুনী সব ব্লাউজ নিচে পরিপাটি কর্মঠ পুরুষদেহের হুঙ্কার...


সানঝা দেওয়া বৌ গ তরা সনঝা কেন নাই দেও গ৷
কুমহার শালায় পźঈপ দেয় নাই কিসে সনঝা দিব গ৷৷
সানঝা দেওয়া বৌ গ তরা সনঝা কেন নাই দেও গ৷
খট্টা শালায় কাপড় দেয় নাই কিসে সনঝা দিব গ৷৷
সানঝা দেওয়া বৌ গ তরা সনঝা কেন নাই দেও গ৷
কুলহ শালায় তেল দেয় নাই কিসে সনঝা দিব গ৷৷
তেল দিলম সলতা দিলম সগ্গে দিলম বাতি গ৷
যত দেবতায় সনঝা লেয় মা ঘরের কূলবতী গ৷৷


পাহাড়ে সন্ধ্যা হয়, যেমন রোজ, শব্দ ষন²মশ উথল পাতাল, মাথা ঘোরে, না কি কাঠি? শরীর চামড়া হয়ে যাওয়া ঢাক গর্জে গর্জে ওঠে, নেশায় পা টলে না মাথা, বুঝে ওঠার আগেই ইউক্লিড ভেঙে তছনছ, সে হয়ে গেছে দুরুহ জটিল, জিলাপী ও কাঠি ভাজা, যেমত ফ্রিসবি ও ফ্লায়ি ংডিস্ক, নাচ গোল গোল ঘুরে ঘুরে, চাঁদের আলোয় ধুইয়ে দিচ্ছে এযাবত্ জমা হওয়া সহস্র আঁধার ও পাহাড়, কান্না পায় জানো? ভীষণ কান্না পায়...


তারকোভস্কি এমনটাই এলিমেন্টাল হয়ে থাকবেন, জলের পরে সাজিয়ে দেবেন আগুন, অগ্নিবলয় ঘিরে ধরবে আমাদের, দুর সব পাহাড়েও লেগেছে আগুন ও নাচ৷ চাঁদের আলোয় ছোট্ট টুসু হয়ে উঠছে যুবতী সরস্বতী, ও তো সরস্বতী প্রতিমাই! তবে কি অ্যাড়ব্যাড় করছি? আশে পাশেই দেখছি আরো কতগুলো সরস্বতী প্রতিমা মাথায় নিয়ে ঘুরে ঘুরে চলা৷ তীব্র আলতা ও দগ্ধ হলুদে সেজে উঠছে মিষ্টান্ন বা চিনি-চিনি কিটকিট ডেলা৷ গা গুলিয়ে ওঠে, জল? চোখে পড়েছে মরা বিড়াল, মরা খরগোশ, মরা পায়রা মাথায় তুলে নাচ, সংজ্ঞাহীন৷ নদী ডাকে, আয় আয়, চাঁদ ভাসে, ভাত ফোটা গন্ধে উন্মনা হয়ে ওঠে মন, জঙ্গল পিছু হটে ষন²মশ চলে যাচ্ছে দূরে দূরান্তরে...

তবেই না বীরপুরুষ, টুসু আসে টুসু যায়,আমার টুসু ধনে বিদায় দিব কেমনে, পাহাড় কাঁপানো নাচ, বুকের দুন্দভী কাঁপে থরথর, তবু ভীষণ শীত করে, বড় বড় চোঙার মত মাইকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলি নিজেকে, ছুটে চলা ট্রেন ভোর কুয়াশা ভেঙে পুরুলিয়া এক্সপ্রেস৷



দ্বিতীয় টুকরো
-------
হায়ঙ্গবিচ আলোয়, সোনার গা, ঁযাকে কাঠিভাজা বলি তাই যেন আলপনা হয়ে ফুটে আছে মাটির দেওয়ালে, ফুটি ফুটি ভাব, আলো তো ফুটে গেছে ঢের সকালে, ফুটে যাও কুন্ডলী, কবচ ও ধোঁয়া৷ শহর মৃত এখন জোনাকি সজ্জায়, যেভাবে বেঁচে থাকে দুরের পাহাড় রাষিন নিশীথ হলে৷ ঠান্ডায় তালুগুলি ঘাসহীন মাঠ, পথঘাট, ব্যপৃত এখন, উল্লাসে উন্মুখ, বাঁকে বাঁধা কলসীতে তাড়ি চলে আসে, তাড়াতাড়ি, আয়রে আয়, আয়রে আয়৷ বম্বে রোড দিল্লি রোড দুর্গাপুর এক্সপ্রেস হয়ে ষন²মশ হারিয়ে যাচ্ছে ঘন কুয়াশার আড়ালে৷ আমি যে রাস্তা ধরে লুধিয়ানার দিকে যাই, জয়পুরে, যেদিন ময়ূর দেখতে ভারি ইচ্ছে করে, এই শীত জানুয়ারী মাসে, অখন্ড ভারতের মানচিষন আঁকা হবে সরোজিনী হাসপাতালের বাইরের দিকে, ঢুকতে বেরোতে জামা মসজিদে সেই মানচিষন দেখব আর ভাবব বুড়ো মানুষটার কথা, বিশাল বড় গামলায় গোলাপ জলের সমুźউর, রঙিন হওয়া বরফেরা মাথা উঁচিয়ে জেগে হিমবাহের মত, ইতস্তত ভেসে বেড়ায় বেহুলার ভেলা, গোলাপের পাপড়িরা, থেমে থেমেই চেঁচিয়ে ওঠে বুড়ো,দো দো কাশ্মীর কাশ্মীর দো রুপইয়া দো রুপইয়া...


চারটে চাঁদ চাঁদ্নী চকের মাথায়৷ তবে কি রাস্তা ভুল করছি আমরা? প্রতি গলির শেষে একটা করে চাঁদ থাকে কেন? জানালা ও খড়খড়ির ওপাশে চাঁদমুখ৷ আলো চমকায়, ঘুরে ঘুরে নাচে, সামনের কাঁচে সিডি ঝুলছে, আলো নাচছে, অর্থাত্ আশায় আশায় বসে আছি ... আরো একটা শীত, ওরে আমার মন, টোলে এসে দাড়ায় গাড়ি, আঁকিবুকি আলো, সিগনালে কমে যায় দ্রুত 58,57,56,55,54...
আরে বাবা ফেরে তো প্রত্যেক মানুষই ঘরে, শীত ও গৃষ্মের রাতে, গোলাপ বা রজনীগন্ধা হাতে, আর কি ই বা দিতে পারি আমি? শীতের উপহার৷ রাস্তায় বিগলিত জেব্রা, মনিটর জুড়ে, ঝাঁকানো টর্চ, কোহিনুর মণি৷ ততক্ষনে আমি ভিজে ম ম, এটা তো তার জানবার কথাও নয়, এই দুর প্রবাসে, পায়রার ঠোঁটে উড়ে যাওয়া চিরকুট, কে তাকে বলেছিল গোকুল পিঠের কথা, গোকুলে বাড়িছে সে, crowমশ রজনীগন্ধা ঝরে, টেলিফোনটি করে বসলাম আমি, এইটুকুতেই বুঝি থেকে যায় R্ণ ও আলোকসজ্জা৷
রাষিন যেন পায়েস পাতা, ঝলমলাচ্ছে ইউক্যালিপ্টাস গুচ্ছ, ভিক্স ভিক্স গন্ধ,অচেতন হয়ে পড়ার উত্কৃষ্ট সময় এখন, দু-চারটে পোষা ইবলিস , শীতের রোźউর যেন খেলা করে সারা পিঠ জুড়ে৷ বাইশ গজ, তাক থেকে হুড়মুড়িয়ে পড়ে যাবে সব বই, ক্যাসেটের স্বর ষন²মশ ফিসফিসিয়ে উঠবে, লাল সদা পিচবোর্ড রঙে ই ঈ উ ঊ, জবুথবু, আয় মারি ঢিল খেলা যখন, একটুকরো কাঁচে, ভেঙে যাচ্ছে ক্ষণ, ঝনঝন শব্দে৷




তৃতীয় টুকরো
-------
ছোটাছুটি৷ আইকম বাইকম৷ সুতরা ংবাইসাইকেল৷ মাইলস, আচ্ছা বেষ্ট অফ মাইলস৷ আর কে? আর কে? রামকৃষ্ঞ নন৷ শুক্লা পঞ্চমী, এন্ডি গেন্ডি, হলুদ হলুদ,ব্যাসবাক্য সমাস, ওরে বদমাশ, ভেন্ডি ভেন্ডি৷ বাবুলাল, কেয়া হো রাহা হ্যায়? লালবাবু, গোলবাবু, চৌকোবাবু, ধরবাবু, করবাবু ইছঔ?ঐ ঐ, এই এই, লুকাও সিগারেট, দে ছুট৷৷৷

এখনও স্কুল মানে শুধু এই দিনটাই, কালের নিয়মে ছোট্ট দেশলাই বাক্স হয়ে যাওয়া ক্লাসরুম, পেন্সিলের মত সরু হয়ে যাওয়া বেঞ্চ, হা হাতস্মি, এখানেই কি লেগে আছে দু:খ সুখের বছরগুলি, কৃষ্ঞচুড়া ফুলের কুঁড়ি ভেঙে ঘুড়ি ঘুড়ি প্যাচ, মুকুট খুলে পড়ে গেছে কবে, ঘ্যাচঘ্যাচ, কেটে গোল্লা বসিয়ে দিচ্ছে আজন্ম রাগে জমে থাকা লালকালি৷ টিচার্স রুম ভেঙে টুকরো টুকরো এখন, ছবিগুলি উড়ে বেড়ায় যেন মায়া, প্রজাপতি আছ কেবল এই পাথর জুড়ে, অন্তত তাদের সাথে দেখা তো হয়, কুশল বিনিময় আর, আর? ডাবি ংও রি-রেকর্ডি৷৷৷

ংবেগম পেট, হায়দ্রাবাদ, হিন্দুর অফিসে বসে আমি আর অরুণাংশু প্রলাপ করে যাব এরকমই সরস্বতী পুজোর দিনে, যোসেফ বয়েজের মত খিচুড়ি গামলায় নেড়ে চলা, অবিরত, বোঁদের গামলায় পাওয়া চুলের কাঁটা থাকবেনা, কিছু নেই৷ প্রতি বছর নতুন স্মৃতি, নতুন রোমন্থন...


বয়ে যাও গঙ্গা, মোর ধমনী হয়ে, আমার স্কুলবাড়ি যেন পাতালগুহায় এক, জমে ওঠা খবরের কাগজ সমুহ, আজ ঠোঙা বানাও, চীনে জাপানে ও চিনেবাদামের৷ কুয়াশা পড়েনা এইখানে, মাছরাঙা করেনা সে ভুল, উড়ে যায় ধবল বক, ইউক্লীড মেনে, সুতরা ংবইয়ের অক্ষরগুলি, দুধসাদা৷ ভয়ংকর শব্দ নিয়ে উড়ে যাচ্ছে শোলার কুচিগুলি, রাষিন মোর প্রিয়তমা, কল্কায় সজ্জায়, গড়ে উঠছে ইমারত, সাদা শাড়ি ঢেকে দিচ্ছে সরস্বতীর যুবতী শরীর, আমার যৌবন দিন স্কুলে স্কুলে, শুক্লে শুক্লে, ঘুরে চলে, তেমন আঙুল ঘোরে, ছিদ্র থেকে ছিদ্রে, যেমন চৌরাশিয়ার বাঁশী, বাজুক৷ প্রহর শেষে, চৈষন মাসে, লাজুক৷ আমের মুকুল, গন্ধে ব্যাকুল, দুলুক৷ ফাটা মাটি, ঢাকে কাঠি, থাকুক৷ সজনে গাছে, ষিনকোণ নাচে, নাচুক৷৷


সুমেরু

No comments: